উড়োজাহাজের উড্ডয়ন অবতরন দেখতে সুনামগঞ্জের অজোপাড়াগাঁ থেকে সিলেটে এসেছেন রহমত উল্লাহ। সাথে মা হারা পুত্রকে নিয়ে এসেছেন। পুত্রের নাম মোশারফ। বয়স ছয়।
রোববার আমার কন্যাকে আনতে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর যাই দুপুরে। সেখানে ভিআইপি লাউঞ্জের কাছে দেখা রহমত উল্লাহর সাথে। উড়োজাহাজ উড্ডয়ন অবতরনের সময় এদিক-ওদিক প্রাণপন দৌড়াচ্ছিলেন এই পিতাপুত্র।
আচমকা তাদের দৌড়ানো দেখে কাছে ডাকি। জানতে চাই এমন দৌড়ানোর কারণ। রহমত উল্লাহ জানালেন তার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ভিমখালী ইউনিয়নের কলকতখাঁ গ্রামে। চেহারায় সরলতা জড়িয়ে। পায়ে জুতো নেই। দৌড়াদৌড়ির সময় প্লাস্টিকের স্যান্ডেল ছিঁড়ে গেছে।
একহাজার টাকা জমা করেছিলেন রহমত উল্লাহ। সেই টাকা নিয়ে জামালগঞ্জ থেকে শাহজালালের দরগায় আসেন রহমত উল্লাহ। সেখান থেকে সালুটিকরের উদ্দেশ্যে গাড়িতে চড়েন। তিনি শুনেছিলেন সালুটিকর নাকি ওসমানী বিমানবন্দর।
কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছে জানতে পারলেন বিমানবন্দর অন্যত্র। তারপর অবস্থান জেনে ফিরে আসেন ওসমানী বিমানবন্দরে। এসেই জীবনের প্রথম উড়োজাহাজ উড়তে দেখে বেজায় খুশি পিতাপুত্র।
আমার কাছে জানতে চাইলেন বিকেল পর্যন্ত কতটা উড়োজাহাজ ওড়বে এবং নামতে দেখতে পারবেন। আমি অপলক তাকিয়ে দেখছিলাম এই পিতাপুত্রকে। মনে মনে ভাবলাম আমাদের গ্রামবাংলায় এখনো এমন রহমত উল্লাহরা আছেন যারা উড়োজাহাজ চড়া দূরের কথা ওড়তেও দেখেননি।
রহমত উল্লাহ বাংলাদেশের সেইসব মানুষের দলের। আমি রহমত উল্লার দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশের চেহারা দেখছিলাম। রহমত উল্লা থাকেন ভাইয়ের আশ্রয়ে। স্ত্রীর মৃ’ত্যুর পর পুত্র মোশারফের মা-ও তিনি বাবাও তিনি। দরিদ্রতাও রহমত উল্লার উড়োজাহাজ ওড়া বা নামা দেখার আগ্রহ দমিয়ে রাখতে পারেনি।
-সংগৃহীত