Wednesday, July 24, 2019

বিয়ার গ্রিলসের কাজ হলো অসম্ভব কে সম্ভব করা!


রাজনৈতিক এক পরিবারে জন্ম, বেড়ে ওঠা। কিন্তু, একদমই পারিবারিক ভাবধারায় বিশ্বাস ছিল না তাঁর। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়। ‘ম্যাকগাইভার’ ও ‘দ্য এ টিম’ গুলে খেতেন। শৈশবেই বাবার কাছ থেকে নৌকা চালনা ও পর্বতারোহনের খুঁটিনাটি শিখে ফেলেন। যখন আট বছর বয়স, তখন বাবা এভারেস্ট পর্বতের একটা ছবি দেন। ব্যস, সেই ছবির চূড়ায় দেখাটাকেই নিজের ধ্যান জ্ঞান বানিয়ে ফেলেন বেয়ার গ্রিলস...

পরের ১৫ টা বছর নিজের স্বপ্নকে পুঁজি করেই পরিশ্রম করে গেছেন। ফলাফল, মাত্র ২৩ বছর বয়সে সবচেয়ে কম বয়সী পর্বতারোহী হিসেবে তিনি এভারেস্টের চূড়ায় নাম লেখান। চারবার এভারেস্টে উঠে তিনি গিনেস বুকেও নাম লেখান। ব্রিটেনের রয়্যাল মেরিন রিজার্ভে তাঁকে সম্মানজনক লেফটেন্যান্ট কর্নেল উপাধি দেওয়া হয়।

ভদ্রলোকের পুরো নাম এডওয়ার্ড মাইকেল গ্রিলস। বোন লারা ডাক নাম দিয়েছিলেন বেয়ার। ব্যস, সেই থেকে তিনি বেয়ার গ্রিলস। ডিসকভারি চ্যানেলের দর্শকরা তাঁকে বেশ ভাল করেই চেনেন। পর্দায় তাঁকে ‘ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড’ অনুষ্ঠানে অসাধ্য সব অ্যাডভেঞ্চার করতে কিংবা দুর্গম সব পথ পাড়ি দিতে দেখা যায়। যদি অনুষ্ঠানটা আপনি দেখে থাকেন তাহলে ‘আমি বেয়ার গ্রিলস। আমি আপনাদের দেখাব কীভাবে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ থেকে বেঁচে ফিরে আসতে হয়।’-এই ডায়লোগটির সাথে খুবই পরিচিত।

টিকে থাকার জন্য তিনি সব করতে পারেন। কিছু না খেয়ে দিনের পর দিন কাটাতে পারেন, কিংবা বেঁচে থাকার তাগিদে অখ্যাদ্য, কুখাদ্য, যাচ্ছেতাইও খেয়ে ফেলতে পারেন। সত্যি, টিভির পর্দায় তাঁকে দেখলে মনে হয় অসম্ভবকে সম্ভব করাই তাঁর কাজ। এসব কত হাজারো রকমের ইনজুরিতে যে তাঁকে পড়তে হয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। শরীরের কোনো অংশের হাড় ভেঙে যাওয়া সাপখোপ, বিষাক্ত মাকড়শা, বাদুরের কামড় খাওয়া তাঁর জন্য কোনো ঘটনাই না।
যদিও এতদূর আসাটা তাঁর জন্য সহজ ছিল না। তিনি তিন বছর ব্রিটিশ আর্মির অধীনে স্পেশাল এয়ার সার্ভিসে কাজ করেন। মাউন্ট এভারেস্টে ওঠার বছর খানেক আগে এক প্যারাসুট দুর্ঘটনায় মারাত্মক ভাবে আহত হন তিনি। শরীরের তিনটি জায়গার হাড় ভেঙে যায়। বাকিটা জীবন হুইলচেয়ারে কাটাবেন, এমন গুঞ্জনও ছিল। যদিও, তিনি মাত্র ১৩ মাসের মধ্যে হাঁটা শুরু করেন।

দুর্ঘটনার ১৮ মাস বাদে রীতিমত এভারেস্ট জয় করে ফেলেন। চূড়ায় উঠতে তিনি সময় নেন ৯০ দিন। দিনটা ছিল ১৯৯৮ সালের ১৬ মে। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৪। এত কম বয়সে কেউই আগে এভারেস্টে ‍চূড়ায় উঠতে পারেনি। যদিও পরবর্তীতে, জেমস অ্যালেন ২২ ও রব গওন্টলেট ১৯ বছর বয়সে এভারেস্টে উঠে এই রেকর্ড ভেঙে দেন।

টেলিভিশনের পর্দায় বেয়ার গ্রিলস শুরু করেন বিজ্ঞাপন দিয়ে। ব্রিটিশ আর্মির প্রচারণামূলক কিংবা ডিওডেরেন্টের বিজ্ঞাপনে তাঁকে দেখা যায়। ২০০৬ সারে তিনি ছয় বছরের জন্য চ্যানেল ফোরের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন।  ২০১২ সালের মার্চে ডিসকভারি চ্যানেলের সাথে বনিবনা না হওয়ায় ছেড়ে দিয়েছিলেন। পরে আবারও ফিরেছেন। আর ‘ম্যান ভার্সেন ওয়াইল্ড’-এর কল্যানে এখন তাঁকে সারা বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশের মানুষ চেনে।

এর বাইরেও কিন্তু বেয়ার গ্রিলসের গুনের কোনো কমতি নেই। তিনি কারাটেতে একজন ব্ল্যাক বেল্টধারী। পড়াশোনাতেও দারুণ ছিলেন, ছিলেন ব্রিটেনের স্বনামধন্য এটন কলেজে। হলিউডের ‘ক্ল্যাশ অব দ্য টাইটান’ সিনেমায় কাজ করার জন্য গ্রিলসকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, তিনি সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
এখন অবধি বেয়ার গ্রিলসের লেখা ১১ টি বই বাজারে এসেছে। এর মধ্যে ‘ফেসিং আপ’ ছিল তাঁর লেখা প্রথম বই। বইটি ব্রিটেনের সেরা ১০ টি বেস্ট সেলার বইয়ের একটি ছিল। পরে ‘দ্য কিড হু ক্লাইম্বড মাউন্ট এভারেস্ট’ নামে বইটি যুক্তরাষ্ট্রেও প্রকাশিত হয়।

২০০৯ সালে তিনি মাত্র ৩৫ বছর বয়সে স্কাউট অ্যাসোসিয়েশনের চিফ স্কাউট হিসেবে নিয়োগ পান। এত কম বয়সে এই সম্মানজনক পদে আগে কখনোই কেউ নিয়োগ পায়নি।

ব্যক্তিজীবনে তিনি দুই সন্তানের বাবা। তাঁর ছেলেও কিন্তু কম অ্যাডভেঞ্চারাস না। মাত্র সাত বছর বয়সেই সুইমিং পুলে ডুবতে থাকা এক তরুণীর জীবন বাঁচিয়েছেন তিনি। এই না হলে বাপ কা বেটা!...

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.