Friday, April 10, 2020

'আয়নাবাজি'র একটি রিভিউ


''চারপাশ বদলে যায়,
থেমে যায় সময়;
সবার জন্য সব সত্য,
আমার জন্য অভিনয়।''

এই একটি সংলাপই আসলে যথেষ্ট 'আয়নাবাজি'কে বর্ণণা করার জন্য । আয়নাবাজির আয়নাতে আমাদের সমাজেরই চারপাশের থাকে মুখোশের আড়ালের মানুষগুলোর আসল রূপ দেখিয়ে দেয় ।
এই শহরের আনাচে-কানাচে অসংখ্য গল্প লুকিয়ে আছে , কিছু গল্প আমাদের চোখের সামনে দৃশ্যমান , কিছু গল্প আমাদের অগচোরেই থেকে যায় , যার অস্তিত্ব হয়তো আমরা ধারণাই করতে পারিনা । এরকমই একটি গল্প পর্দায় তুলে এনেছেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী । পরিচালক হিসেবে তিনি যে খুব পরিচিত কেউ তা বলবোনা । কারণ তিনি ছিলেন বিজ্ঞাপণের নির্মাতা আর বিজ্ঞাপণের পেছনের মানুষদের খবর আমরা কে কতোই বা রাখি ? তিনি যখন এই চলচ্চিত্র নিয়ে আসেন তখনও এর সফলতা নিয়ে কিন্ঞ্চিত সন্দিহান ছিলাম কারণ ঢালিউডের সেসময়ে দর্শকরা প্রায় হল থেকে মুখ ফিরিয়েই নিয়েছিলো । মানহীন ছবির মিছিলে বছরে শুধু ঈদের সময়টাতেই মানুষ একটু হলমুখী হতো মানসম্মত কাজের আশায় । মাল্টিপ্লেসগুলো টিকে থাকতো মার্কিন চলচ্চিত্রের কল্যানে । কিন্তু আয়নাবাজি যখন হলে আসে তখন কোন উৎসব বা সরকারি বিশেষ দিবস ছিলোনা , প্রচারণাও সেরকম হয়নি । তবুও চলচ্চিত্র মুক্তির পরে আলোড়ন ফেলে দেয় । মানুষের ভীরে হলে জায়গা দেওয়া ভার । মানসম্মত গল্পের হাহাকারটা খুব ভালোই বোঝা যায় ।
এজন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে একটা ধন্যবাদ দিতেই হয় । ফেসবুকের রিভিউএর কল্যানেই মুভিটি এতটা সাড়া ফেলে ।
প্রধান চরিত্রে চন্ঞ্চল চৌধুরী অসাধারণ , অনবদ্য অভিনয় করেছেন । ছয়টি ভিন্ন চরিত্রের প্রতিটিতেই তিনি ছিলেন যথাযথ । বলতে গেলে তিনিই মুভির সবকিছু । বহুদিন পর ফিরেই আবার বাজিমাত করে দিয়েছেন তিনি এবং পরবর্তীতে 'দেবী'তেও সে ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্য রেখেছেন । নবাগতা হিসেবে নাবিলা তার ন্যাচারাল অভিনয়ের উপযুক্ত যাচাই করেছেন , পার্শ্ব চরিত্রে পার্থ বড়ুয়া , গাউসুল আলম শাওন আর সেই '' ছোট বাচ্চাটা '' নিজ নিজ চরিত্রে পারফেক্ট ছিলেন । অতিথি চরিত্রে আরিফিন শুভ একটা সার্প্রাইজ ছিলো ।
সংলাপগুলো একটা মুভির সাথে দর্শককে ধরে রাখে । এই মুভির সংলাপগুলো এই মুভির ভাইরাল হবার অন্যতম একটা কারণ । ঢালিউডের মুভির সংলাপ দিয়ে আলোচনায় আসা সচরাচর ঘটেনা । প্রতিটা সংলাপই দূর্দান্ত ছিলো এবং বেশ কিছু সংলাপ তখন সবার মুখে মুখে ঘুরতো ।

থ্রীলার মুভিতে বিজিএম অত্যন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে গল্পের আবহটা আরও ভালোভাবে অনুভব করাতে । সেই হিসেবে মুভির বিজিএম ১০/১০ । এরপর বলতে হয় টাইটেল ট্র্যাকটার কথা । মুভির জনারের সাথে পুরোপুরি খাপ খায় গানটি । এরকম বিজিএম যে ঢালিউডে হতে পারে তা অনেকেরই ধারণায় ছিলোনা । হাবিব ওয়াহিদের ''ধীরে ধীরে যাওনা সময় এর পুনঃসৃষ্টি শ্রুতিমধুর ছিলো । অর্ণবের '' এই শহর আমার '' গানটা এই কঠিন শহরকে আবার ভালোবাসতে শেখাবে । চিরকুটের '' পাপ জমাই '' গানটা হৃদয়স্পর্ষী ছিলো ।
সিনেমাটোগ্রাফির কথা আলাদা করে বলতেই হয় । পুরান ঢাকার এক অচেনা রূপ উঠে এসেছে এই মুভিতে । পুরাণ ঢাকা বলতেই যাদের চোখে হাজার হাজার রিক্সা , চিপা গলি , পুরনো ঘিন্ঞ্জি বাড়ি ভেসে ওঠে তারা নতুন করে চিনবে এই এলাকাকে । ভিএফএক্সের কাজ যেটুকু ছিলো নিখুঁত ছিলো ।

সব মিলিয়ে লকডাউনের এই সময়ে বাসায় বসে পড়ন্ত বিকেলে উপভোগ করার জন্য উপযুক্ত চলচ্চিত্র । দূর্দান্ত থ্রিলীং গল্প , তার মাঝে আবার ছোট্ট একটি ভালোবাসার গল্প আর কিছু ভাঁড়ামোবিহীন কমেডি ।
IMDB - 9.2/10
লিখেছেন-শাফিন আহমেদ

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.