Thursday, October 3, 2019

ছোট্ট মুশফিকের যেই যাত্রা আজও চলমান মুশফিকের আপন মহিমায়


মুশফিকুর রহিম, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে যত জন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান খেলেছেন সবার সেরা যে তিনি হবেন তাঁতে কেউই দ্বিমত পোষন করবার দুঃসাহস দেখাবেননা।
১৯৮৭ সালের ৯ই মে তারিখে বগুড়ায় জন্মনেয়া খর্বাকৃতির মহাকাব্যিক এই ক্রিকেটার এখন পর্যন্ত তাঁর কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেই চলছেন।
তিনি ২০০৫ সালে তৎকালিন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান খালেদ মাসুদ পাইলটের ব্যাকআপ হয়ে ইংল্যান্ড সফর করেন।এবং ২৬ মে ২০০৫ ইং তারিখে মাত্র ১৬ বছর বয়সে (সকল ক্রিকেটারের স্বপ্নের স্টেডিয়াম)লর্ডসে স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেব টেস্ট ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন।

দলের সাথে ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন ব্যাক-আপ উইকেটরক্ষক হিসেবে। তার ব্যাটিং নিয়ে ছিলো না তেমন কোন উচ্চাশা। অথচ সফরের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে ৬৩ এবং অপরাজিত ১১৫ রানের ইনিংস খেলে টিম ম্যানেজম্যান্টকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেন ১৬ বছরের ‘সেই ছোট্ট’ ক্রিকেটার।

যার ফলে ওই সফরের ১ম টেস্টে ঐতিহাসিক লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামিয়ে দেয়া হয় ১৬বছরের তরুণ মুশফিকুর রহিমকে। ম্যাচে (২০ ও ৯) রানের ছোট্র দুইটা ইনিংস খেললেও তার ব্যাটিং টেকনিকে অভিভুত হয়ে যান ক্রিকেটবোদ্ধারা।
এরপর অ্যাংকেল ইনজুরিতে পরে মাঠের বাহিরে দীর্ঘদিন থাকেন ৫ফুট ৩" উচ্চতার এই তারকা।
২০০৬ সালে অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন তিনি।
সেই টুর্নামেন্টে তাঁর অধিনে সাকিব ও তামিম ও অংশগ্রহন করেন।
জিম্বাবুয়ে সিরিজে ২০০৬ সালে আবার দলে ডাকপান মুশফিক, তাঁর ওয়ানডে অভিষেক হয় সে বছরের ৬ আগস্ট হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে।
এবং টি২০ আভিষিক্ত হন ২০০৬ এর ২৮ নভেম্বরে শেখ আবু নাছের স্টেডিয়ামে।
২০০৭ বিশ্বকাপের দামামা বেজে উঠল, সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা করে নিলেন তিনি, তা নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি।

বিশ্বকাপের ১ম ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে সকল সমালোচনার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিলেন এই খুদে যোদ্ধা। শুরু হল নতুন পথচলা ।

২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। তার অধীনে বাংলাদেশ টেস্টে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, শ্রীলংকার মত পরাশক্তিদের। প্রথমবারের মতো খেলেছে এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ফাইনালে। সবমিলিয়ে ৩৭টি ওয়ানডে, ৩৪টি টেস্ট এবং ২৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুশফিক।

১৪বছরে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৭টি টেস্ট খেলেছেন মুশফিক। দেশের ইতিহাসের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান এখনো পর্যন্ত মোট ৬টি সেঞ্চুরি ২টি ডাবল সেঞ্চুরি ও ১৯ টি হাফ সেঞ্চুরিতে রান করেছেন ৪০২৯। ওয়ানডে ক্রিকেটে ২১৬ম্যাচ খেলে মুশফিকের রান ৬১০০, সেঞ্চুরি ৭ ও হাফ সেঞ্চুরি ৩৭টি। ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণ টি-টোয়েন্টিতে টাইগারদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮১টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ৪ ফিফটিতে মুশফিকের নামের পাশে রয়েছে ১২০১রান।
মুশফিক বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিলেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে স্নাতকত্বর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী মুশফিক ইতিহাস বিভাগে প্রথম-শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। 
২০১৮ সালে নভেম্বরে জিম্বাবুয়ে এর বিপক্ষে ২য় টেস্ট এ তার ও বাংলাদেশের হয়ে কোনো ব্যাটসম্যান এর সর্বোচ্চ ২ টি ডাবল সেঞ্চুরি এবং উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ দুইটি ডাবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গরেন।
২৬ মে তারিখে লর্ডসে শুরু হয়েছিল ছোট্ট মুশফিকের যেই যাত্রা, তা আজও চলমান মুশফিকের আপন মহিমায়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের হাটি হাটি পা পা থেকে শুরু করে শক্ত সামর্থ হয়ে দৌড়ানো পর্যন্ত, প্রত্যেক ঘটনার সাক্ষী মুশফিক।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা টেকনিক্যাল সাউন্ড ব্যাটসম্যান এই কিংবদন্তির কাছে আমাদের প্রত্যাশার পারদ অনেক উপরে থাকাটা নিশ্চয় দোষনীয় হবেনা।
"সুস্থ ও সাবলিল থাকুন মুশফিক,বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আরো অনেক দেবার আছে আপনার।"

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.